৭৩ পেরিয়ে ৭৪-এ দেশ স্বাধীনের দল আওয়ামীলীগ
বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগ-বাংলাদেশ’ ইতিহাসে এই তিনটি নাম অমলিন, অবিনশ্বর ও একই সূত্রে গাঁথা। মহান মুক্তিযুদ্ধর মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এবং গণমানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই কেটে গেছে লড়াই আর সংগ্রামে। হত্যা, ষড়যন্ত্র- সবই দেখেছে দলটি। সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির অর্জন অনেক। দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা টানা সাড়ে ১৩ বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি তার নেতৃত্বে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ দেশের অন্যতম পুরনো, অসাম্প্রদায়িক, সর্ববহৎ ও বাঙালির জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখণ্ডের প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদশের সব উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কাজ প্রথম শুরু করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরাধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধর মাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হলেও দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যম ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে। মাঝে এক মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও দলের অনেক নেতাকর্মী হতাহত হন। ২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আরেক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময় ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি এবং ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে এ দলটি।
বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিনত করার লক্ষ্য নির্ধারন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মানবতার জননী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও প্রশংসিত।
নির্যাতনের শিকার ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসাও দিচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু বর্তমানে প্রায় ৭৪ বছরে উন্নীত হয়েছে, মহিলা ও শিশু মৃত্যুহার কমেছে। এখন বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সম্মানের চোখে দেখে। দলটি করোনা মোকাবিলা করে যখন ইতিহাসের সবচেয়ে ‘সুসময়’ পার করছিল, তখনই সামনে এসেছে ভয়াবহ বন্যা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে আজ বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়েছেন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকুক আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই প্রত্যাশা কামনা করি। আধুনিক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ।
লেখক:
সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।