বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য সংঘাতহীন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের সমৃদ্ধির জন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে—এমন আশা করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না।

 

দেশের অগ্রগতির জন্য রাজনৈতিক সংঘাতহীন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।

রাজনৈতিক সহিংসতা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বড় বাধা। ইদানীং রাজপথে সহিংসতা দেখা যাচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সব পক্ষের দায়িত্ব রয়েছে।

রাজধানীর এক হোটেলে গতকাল বুধবার আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজসভায় পিটার ডি হাস এ কথা বলেন। ‘ইউএস-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক: ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণই চাবিকাঠি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য দেন তিনি। এ ছাড়া বক্তব্য দেন অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ ও সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য সংঘাতহীন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে পাঁচটি লক্ষ্য তুলে ধরেন। এগুলো হলো শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ; গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার; সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে সহনশীলতা; রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরতে সহায়তা করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মার্কিন বিনিয়োগ সম্প্রসারণ।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে। ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্থগিত থাকা বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত রপ্তানি–সুবিধা (জিএসপি) নিয়েও কথা বলেন তিনি।

পিটার ডি হাস বলেন, শান্তিপূর্ণ নিরাপদ বাংলাদেশ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেশি। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পর্ক বিরাজমান। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত পড়ছে। বেসরকারি খাত জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্পৃক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যদশা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।

মার্কিন বিনিয়োগ সম্পর্কে পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বের হচ্ছে। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন দরকার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্র সফরে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য সংঘাতহীন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগ করার আগে সুশাসন, সহজ ব্যবসায় পরিবেশ, দক্ষ শ্রমশক্তির সহজলভ্যতা ও মুনাফা—এসব বিষয় বিবেচনা করে থাকেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে আছে।

পিটার হাস আরও বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মানবিক কারণে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। এখন তাদের নিরাপদে দেশে ফিরে যাওয়া নিয়ে কাজ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে সহযোগিতা করছে।

জিএসপি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, শ্রমিক নিরাপত্তা প্রশ্নে বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করা হয়। শ্রম অধিকার ও সিবিএ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগসংক্রান্ত আগামী সংলাপে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং শুল্কায়নসংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে পারলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ২০ শতাংশ বাড়বে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সাবেক সভাপতি রূপালী চৌধুরী, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নিট পোশাকমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া প্রমুখ।

 

 

নাইকো মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানি পেছাল

দেশে ৩৪ শতাংশ মৃত্যু হৃদ্‌রোগে

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.