হারিয়ে যাওয়া মানুষের প্রজাতি, নিয়ান্ডারথাল
পশুপাখির বা প্রাণী জগতের যেমন নানা প্রজাতি রয়েছে, তেমনি মানুষেরও রয়েছে ভিন্ন প্রজাতি।
তবে বিবর্তনের পথ হেঁটে অন্য সব প্রজাতিকে টেক্কা দিয়ে আধুনিক মানুষ হিসেবে বর্তমানে আমরাই প্রতিষ্ঠিত। টিকে রয়েছি কয়েক হাজার বছর ধরে। তেমনই এক প্রজাতি নিয়ান্ডারথাল।
মানুষের প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কাছাকাছি সময়ের প্রজাতি হচ্ছে নিয়ান্ডারথাল। আজ থেকে প্রায় ৩০ বা ৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় এ প্রজাতি।
তাদের অসংখ্য জীবাশ্ম উদ্ধার করা গেছে বর্তমান সময়ে এসে। ফলে অন্যান্য প্রজাতির চেয়ে নিয়ান্ডারথালদের সম্পর্কেই আমরা জানতে পেরেছি বেশি।
১৮২৯ সালে বেলজিয়ামের এঞ্জিসের কাছাকাছি গুহা থেকে একটি নিয়ান্ডারথাল শিশুর মাথার খুলি আবিষ্কার করা হয়। নিয়ান্ডারথালদের পাওয়া ফসিলগুলোর মধ্যে এটিই ছিল প্রথম ফসিল।
তবে ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আরও ফসিল আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এটি সম্ভাব্য মানব পূর্বপুরুষ হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। ১৮৫৬ সালে জার্মানির নিয়ান্ডার উপত্যকা থেকে আবিষ্কার করা হয় নিয়ান্ডারথালের একটি ফসিল।
নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষ উভয়েই একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। জেনেটিক গবেষণাও প্রমাণ করে, আমাদের ডিএনএর কিছু অংশ পূর্বপুরুষদের থেকে নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে ভাগ করে পেয়েছে আধুনিক মানুষেরা।
গবেষকরা বলছেন, আধুনিক মানুষেরা তাদের আবাস দখল করায় নিয়ান্ডারথালরা ৪০ হাজার বছর আগে বাস্তুচ্যুত হয়। একটি বড় সংখ্যক নিয়ান্ডারথালের খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতার সংকোচনও তাদের জায়গায় আধুনিক মানুষ দ্রুত প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
জিব্রাল্টারে নিয়ান্ডারথালদের কিছু বসতি ছিল। সেখানকার আইবেরিয়া প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট বিশ্লেষণে জানা গেছে, আধুনিক মানুষের চেয়েও বনভূমির পরিবেশে ভালো শিকারি হিসেবে অভিযোজিত নিয়ান্ডারথালরা গরম কাপড় পরতো, ভয়ঙ্কর শিকারি ছিল এবং তাদের অত্যাধুনিক পাথরের হাতিয়ার ছিল। মৃত পশুর মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ দিয়ে উড়ন্ত পাখি শিকারের মতো বুদ্ধিও অর্জন করেছিল।
জার্মানির জাঁ জ্যাক লিপজিগ বিবর্তনমূলক নৃ-বিজ্ঞান ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের হাবলিন বলেন, হোমো স্যাপিয়েন্সরা তাদের বাসস্থান দখলে নিয়ে নিলে নিয়ান্ডারথালরা খুব শিগগিরই বাস্তুচ্যুত হয়।
ফলে আধুনিক মানুষের কাছে প্রতিযোগিতায় হেরেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় তারা। জার্মানির টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকোলাস কোনার্ডের দল নিয়ান্ডারথালদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন।
তার মতে, আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হলে হেরে গিয়েই ইউরোপ- আফ্রিকা তথা পুরো পৃথিবী থেকেই বিদায় নিতে বাধ্য হয় এই নিয়ান্ডারথালরা।
শিক্ষা অপরাধ স্বাস্থ্য অর্থনীতি রাজনীতি আন্তর্জাতিক খেলাধুলা লাইফস্টাইল সারাদেশ